স্টাফ রিপোর্টার :
উপজেলা নির্বাচনে পক্ষে-বিপক্ষে সমর্থনকে ঘিরে সোনারগাঁয়ের হাসনাত পরিবারে ফাটল দেখা দিয়েছে। বর্তমান এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত প্রকাশ্যে আনারস প্রতীকের প্রার্থী বাবুল ওমর বাবুকে সমর্থন জানালেও হাসনাত পরিবারের অধিকাংশ সদস্য ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী মাহফুজুর রহমান কালামের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
বিশেষ করে, হাসনাত পরিবারের অন্যতম সদস্য কায়সার হাসনাতের চাচা মনির হোসেন, সাবেক এমপি মরহুম মোবারক হোসেন এর পুত্র ও কায়সার হাসনাতের চাচাতো ভাই এরফান হোসেন দীপ, কায়সার হাসনাতের আরেক চাচাতো ভাই তানহা মোশারফসহ হাসনাত পরিবারের প্রায় প্রত্যেকেই মাহফুজুর রহমান কালামকে সমর্থন জানিয়েছেন। তার ঘোড়া প্রতীকের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা সহ নির্বাচনী সভাও করছেন তারা।
অন্যদিকে, এমপি কায়সার হাসনাত শুরুতে রফিকুল ইসলাম নান্নু এবং পরবর্তীতে তুমুল বিতর্কিত প্রার্থী বাবুল ওমর বাবুকে নতুন করে সমর্থন দেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এমপি কায়সার হাসনাত ব্যতিত হাসনাত পরিবারের প্রায় সকলেই কালামকে সমর্থন দিয়েছেন।
জানা গেছে, নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে সোনারগাঁ। প্রার্থীদের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকেই কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এর নেপথ্যে এমপির সমর্থনকে দুষছেন সোনারগাঁয়ের প্রবীন নেতারা।
তারা বলছেন, বর্তমান সংসদ সদস্য কায়সার হাসনাত দলকে ঐক্যবদ্ধ না করে উল্টো বিভাজন সৃষ্টি করেছেন। দলীয় প্রতীক বিহীন এই উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিীতা করা চার প্রার্থীর প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা হলেও কায়সার হাসনাত এমপি হয়েও বাবুল ওমর বাবুকে সমর্থন দিয়ে বাকি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদেরকে একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছেন। এমনকি তিনি তার নিজ বলয়কেও সংকীর্ণ করে রেখেছেন। ফলে সোনারগাঁয়ে আলোচনা-সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছেন এমপি কায়সার হাসনাত। কেউ কেউ তাকে ইঙ্গিত করে ভোটের বেপারী বলেও মন্তব্য করছেন।
সম্প্রতি কায়সার হাসনাতকে ইঙ্গিত দিয়ে সোনারগাঁয়ের আওয়ামী লীগ নেতা গাজী মুজিবুর তাকে ভোটের বেপারী বলে আখ্যায়িত করেছেন। এর ব্যাখ্যায় স্থানীয়রা বলছেন, কায়সার হাসনাত শুরুতে সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নুকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেই কায়সার হাসনাতই শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে দুই হাতে টাকা উড়িয়ে যাওয়া বিতর্কিত বাবুল ওমর বাবুকে নতুন করে সমর্থন জানান। এতে কায়সার হাসনাতকে নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। ফলে তাকে ভোট বেপারী বলে অনেকেই আড়ালে মন্তব্য করছেন।
এদিকে, গত ১৭ই মে বিকেলে সোনারগাঁ কলেজ কলেজ মাঠে মোগরাপাড়া ইউনিয়নবাসীর উদ্যোগে ঘোড়া প্রতিককে বিজয়ী করতে এক জনসভার আয়োজন করা হয়। সেই জনসভায় কায়সার হাসনাতের চাচা মনির হোসেন আগত সকল নেতৃবৃন্দকে ঘোড়া প্রতিকে ভোট দিতে আহবান জানানোর পাশাপাশি মাহফুজুর রহমান কালামকে তাদের পরিবারের একজন সদস্য বলে ঘোষণা দেন।
নির্বাচনী জনসভায় এমপি কায়সার হাসনাতের চাচাতো ভাই এবং সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেনের ছেলে তানহা মোশারফ বলেন, ‘আমার বাবার সাথে কালাম ভাই নির্বাচন করেছে সেই নির্বাচনে তিনি তিনবারই পরাজিত হয়েছেন। তবে এতে কালাম ভাইয়ের হারানোর কিছু নেই। আমি মনে করি, কালাম ভাই বড় ভাইয়ের সাথে পরাজিত হয়েছে। কিন্তু বাবার শেষ সময়ে কালাম ভাই পাশে ছিলেন। কালাম ভাইকে তিনি অনেক পছন্দ করতেন। আমরা কালাম ভাইয়ের পাশে আছি। এবারের নির্বাচনে অন্যান্য যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা সবাই চাঁদাবাজ। একমাত্র কালাম ভাই-ই যোগ্য ব্যক্তি। তাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে হবে।’
সভায় মোবারেক হোসেন স্মৃতি সংসদের চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি মোবারক হোসেন এর পুত্র এরফান হোসেন দীপ বলেন, ‘কালাম ভাই যখনই প্রার্থী হোন তখনই ষড়যন্ত্র শুরু হয়। একদল ষড়যন্ত্রকারী চাচ্ছে মোগরাপাড়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব কেড়ে নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের বর্ডারের প্রার্থীকে বেছে নিতে। তাদের এই চক্রান্ত সফল হতে দেয়া যাবে না। সেজন্য কালাম ভাইকে একটি করে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।’
কায়সার হাসনাতের চাচা মনির হোসেন বলেন, ‘একটা চক্রান্তকারী ভূমিদস্যু সোনারগাঁকে লুটপাট করতে কাজ করছে। তারা সোনারগাঁ থেকে টাকা লুটপাট করে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে দিয়ে আসে। সেই লুটপাটকারীরা কালামকে মাইনাস করে সন্ত্রাসী বাবুকে নির্বাচিত করতে চায়। আমি আজ থেকে ঘোষণা দিচ্ছি কালাম আমাদের পরিবারের একজন সদস্য। আমাদের পরিবারের সদস্য হিসেবে সকলে ২১ তারিখে ঘোড়া মার্কায় ভোট দিবেন।’